ত্রিপুরা জাতির সমস্যা ও সমস্যা উত্তরণের উপায়: একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা
- অমরজিৎ ত্রিপুরা
ভূমিকা: ত্রিপুরা ভারতবর্ষের এক প্রাচীন জাতি। স্বাধীন জাতি হিসেবে রাষ্ট্র শাসনের ইতিহাসও হাজার হাজার বছর। এ জাতি একটানা দু'হাজারেরও অধিক বছর ধরে ভারতবর্ষের এক বিরাট অঞ্চল স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে শাসন করেছিল। কিন্তু ইতিহাসের উন্থান পতনের অংশ হিসেবে মহাকালের এক পর্যায়ে এসে ত্রিপুরা জাতির স্বাধীন রাষ্ট্র ধ্বংস হয়ে যায়। পৃথিবীর অর্থনীতি ও রাষ্ট্রীয় ভৌগলিক কাঠামোর পরিবর্তনের অংশ হিসেবে সারা ভারতবর্ষসহ পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ রাষ্ট্র ও ভৌগলিক সীমানার পরিবর্তন ঘটে এবং বৃটিশ সাম্রাজ্যের অধীনস্ত্ম হয়। বৃটিশ এসময় ত্রিপুরা রাজ্যের অর্থণেতিক ÿেত্রসমূহ দখল করে নেয়। কুমিলস্না, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও সিলেট বৃটিশ সরকার দখল কওে নেয়। এসব অঞ্চল ছিল ত্রিপুরা রাজার প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক ÿেত্র। এসব অঞ্চলের প্রজারাই ত্রিপুরা রাজার কোষাগার শক্তিশালী করে। ভারতবর্ষে বৃটিশ উপনিবেশকালে পার্বত্য ত্রিপুরার ভৌগলিক সীমানা নিয়ে ত্রিপুরা রাজ্য নামে মাত্র স্বাধীন রয়ে যায়।
ত্রিপুরা জাতির সমস্যা: বর্তমানে ত্রিপুরা জাতি নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। শত শত বছর ধরে বঞ্চণা ও নিপীড়ণের কারণে ত্রিপুরা জাতি আজ বিভিন্ন দিক দিয়ে প্রান্ত্মিক অবস্থানে নিপতিত। রাজনৈতিক কারণে বৃটিশের দু'শ বছরে ত্রিপুরা জাতির মানুষেরা নানাভাবে বঞ্চণার শিকার হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম বৃটিশের সরাসরি শাসনাধীনে চলে যাবার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মানুষেরা অধিক পরিমানে বঞ্চণা ও নিপীড়ণের শিকার হয়েছিলো। বৃটিশ সরকার চাকমা সার্কেলের অংশ রামগড়, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা, পানছড়ি ইত্যাদি অঞ্চল নিয়ে যে মান সার্কেল বা মঙ সার্কেল প্রতিষ্ঠা করে তা ছিল মূলত: ত্রিপুরা অধ্যুষিত এলাকা। বৃটিশ সরকার ত্রিপুরা অধ্যুষিত অঞ্চল মান সার্কেলে ত্রিপুরাদের মধ্য থেকে সার্কেল চীফ নিয়োগ না করে মারমা জাতির মধ্য থেকে নিয়োগ করে- এটি তাদের 'ভাগ কর, শাসন কর নীতি'র অংশ। বৃটিশ সরকার কয়েকটি কারণে এ ধরণের হীন নীতি গ্রহণ করে- ১. ত্রিপুরা রাজা ও ত্রিপুরা জাতির প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য, ও ২. চাকমা রাজাকে দুর্বল করার জন্য। ত্রিপুরা অধ্যুষিত অঞ্চলে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে সাের্কল চীফ নিযুক্ত না হওয়ায় পরবর্তীতে এ জনগোষ্ঠীর মাঝে এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। তাদের অর্থনীতি, ভূমি, শাসনব্যস্থার অংশীদারিত্ব ইত্যাদির ÿেত্রে নৈতিবাচক প্রভাব পড়ে। পাকিস্ত্মান আমলেও ত্রিপুরা জাতি নানাভাবে ÿতির শিকার হয়। পাকিস্ত্মান সরকার ভারত থেকে চলে আসা বাঙালীদের ত্রিপুরা অধ্যুষিত এলাকায় পুনর্বাসন করে। পাকিস্ত্মান সরকার কর্তৃক কাপ্তাই বাঁধ করা হলে চাকমা সার্কেলের লোকজন মান সার্কেলে চলে আসে। সর্বশেষ জিয়া রহমানের আমলে মঙ সার্কেলে সবচেয়ে বেশী পরিমানে সেটেলার পুনর্বাসন করা হয়। এর ফলে মঙ সার্কেলে অর্থাৎ বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলায় ত্রিপুরা জাতি সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে। সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার কারণে বর্তমানে এ জাতি থেকে একজন ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আসাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে যাই হোক আমরা নিম্নে ত্রিপুরা জাতির প্রধান প্রধান সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো এবং সেসব সমস্যা কিভাবে সমাধান আসতে পারে সেবিষয়েও সংÿিপ্ত আকাওে আলোচনার চেষ্টা থাকবে।
প্রধান প্রধান সমস্যা
১. শিÿা সমস্যা: (ক) সব ত্রিপুরা গ্রামে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকা; (খ) স্বল্প শিÿার হার, (গ) সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় সচল, সক্রিয় নয়, (ঘ) সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিÿণের অভাব- ১. ভাল শিÿকের অভাব, ২. ম্যানেজমেন্ট কমিটি সক্রিয় নয়, ৩. শিÿা প্রশাসন সক্রিয় নয়, ৪. অভিভাবক সচেতন নয়, ৫. গ্রামে শিÿার পরিবেশ না থাকা ইত্যাদি;
২. ভূমি সমস্যা: (ক) ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকেরা তাদের চিরায়ত ভূমি থেকে নানা কারণে উচ্ছেদ হচ্ছে। বিশেষত: শক্তিশালী জাতিসমূহের অর্থশালী ভূমিদস্যুরা ত্রিপুরাদের চিরায়ত ভূমি বেদখল করছে; (খ) এ ভূমি বেদখল প্রক্রিয়ায় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর কিছু কিছু লোক ভূমিদস্যুদের সহায়তা করছে; (গ) ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বেশীরভাগ সামাজিক-রাজনৈতিক নেতা ও শিÿিত সমাজের নির্লিপ্ততা, (ঘ) ভূমি বিষয়ে ত্রিপুরাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব ইত্যাদি;
৩. সুনেতৃত্বের অভাব: ত্রিপুরা সমাজে সকল স্ত্মরে নেতৃত্বের সংকট রয়েছে। যৌথ নেতৃত্বও ঠিকভাবে বিকাশ লাভ করতে পারছে না।
অন্যান্য সমস্যা
১. স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা সমস্যা; ২. অর্থনৈতিক সমস্যা; ৩. সংকীর্ণ মানসিকতা ও ভূল চিন্ত্মাধারা (আঞ্চলিকতাবাদ, দফাবাদ, ব্যক্তিস্বার্থবাদ, আত্মীয়তাবাদ ইত্যাদি); ৪. একতার অভাব; ৫. সাহসের অভাব; ৬. চেতনার অভাব ইত্যাদি।
ত্রিপুরা জাতির প্রেÿাপটে উপরে উলেস্নখিত সমস্যাসমূকে অপ্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি। কারণ ত্রিপুরা জাতিকে যদি শিÿিত করা যায় তাহলে তার অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান হবে, তার চিকিৎসার সমস্যা, সাহস ও একতার অভাব এবং তার নানা ধরণের সংকীর্ণ মানসিকতা ও ভূল চিন্ত্মাধারা অনেকাংশে বিতাড়িত হবে। তাই এসব সমস্যা শিÿার অধীন। আমরা বাস্ত্মবেও দেখতে পাই- ত্রিপুরা শিÿিত ব্যক্তি যারা চাকরি করছেন বা নানান পেশায় রয়েছেন, তারা সমাজের অন্যান্যদের তুলনায় আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছল। তারা স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ÿেত্রে সচেতন। তারা সমাজেও নানাভাবে অবদান রাখছেন। তাই শিÿাটাই প্রধান।
অগ্রাধিকার বিষয় বা সমস্যা
১. শিÿা উন্নয়ন: ত্রিপুরাদের উন্নয়নের প্রশ্নে অগ্রাধিকার তালিকায় শিÿা উন্নয়নকে চিহ্নিত করা দরকার। কারণ শিÿা হলো জাতির মেরম্নদন্ড। শিÿা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না। শিÿা ছাড়া একটি জাতিকে জাগিয়ে তোলা অত্যন্ত্ম কঠিন। উপরের আলোচনায়ও ত্রিপুরা জাতির জন্য উন্নয়ন কর্মসূচীতে অগ্রাধিকার নির্ধারণের প্রশ্নে শিÿা উন্নয়ন বিষয়টির প্রতি নির্র্দেশিত হয়েছে।
কেন শিÿাকে অগ্রাধিকার দেয়া দরকার?
(ক) শিÿা একজন ব্যক্তিকে আলোকিত মানুষে পরিণত করতে পারে। শিÿা মানুষের চেতনাকে জাগিয়ে তুলতে পারে, জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটাতে পারে। ব্যক্তিসমষ্টির মাঝে জাতীয় চেতনা উন্মেষিত হলে একটি জাতির ঐক্য ও সংহতি সৃদৃঢ় হয়।
(খ) শিÿা সমাজে ব্যক্তির মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে। সমাজ ও রাষ্ট্রের মানুষ শিÿিত ব্যক্তিকে মান্য করে, মর্যাদা দেয়।
(গ) শিÿা একজন মানুষের দারিদ্র্য মোচন করে;
(ঘ) শিÿা একজন মানুষকে অর্থনেতিক ও অন্যান্য দিক দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলে;
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, শিÿা মানুষকে একসাথে মান-মর্যাদা, জ্ঞান-বুদ্ধি, অর্থ, চেতনা, সমৃদ্ধি ইত্যাদি এনে দেয়। যেহেতু ত্রিপুরা জাতির শক্তি ও সামর্থ্য সীমিত তাই ত্রিপুরা জাতিকে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে জাতির উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে। একসাথে সমাজের সব সমস্যা সমাধানের জন্য কর্মসূচী গ্রহণ করা বাস্ত্মবসম্মত হবে না। শিÿা যেহেতু একটি জাতিকে একসাথে অনেক কিছু এনে দেয়, তাই এই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার তালিকার অন্যতম বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করা বাঞ্চনীয় হবে।
২. চিরায়ত ভূমি রÿা ও এর সদ্ব্যবহার: ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকেরা বৃটিশ আমল থেকে তাদের চিরায়ত ভূমি থেকে উচ্ছেদ হতে হতে আজ একেবারে প্রান্ত্মিক অবস্থায় নিপতিত হয়েছে। দুর্গম ও প্রত্যন্ত্ম অঞ্চল হলো ত্রিপুরাদের বর্তমান আবাসস্থল যেখানে সভ্যতা ও আধুনিক সেবা পৌঁছায় না। তথাপি এই দুর্গম ও প্রত্যন্ত্ম অঞ্চলের ভূমিই ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বেশীরভাগ মানুষের জীবন জীবিকার প্রধান অবলম্বন।
কেন চিরায়ত ভূমি রÿা ও এর সদ্ব্যবহারকে অগ্রাধিকার তালিকার দ্বিতীয় প্রধান হিসেবে নির্বাচন করা হবে?
(ক) জুমচাষ, জমিচাষ ও ফলজ-বনজ চাষ হচ্ছে এখনো ত্রিপুরাদের প্রধান পেশা। এই চাষসমূহ ভূমিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। তাই ত্রিপুরাদের প্রধান জীবন-জীবিকার প্রধান উৎস হলো ভূমি ও ভূমির সাথে সংশিস্নষ্ট প্রাকৃতিক সম্পদ। ভূমি নেই তো ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর পেটে খাদ্য নেই, অর্থ নেই, বস্ত্র নেই। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বেশীরভাগ মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিÿা, চিকিৎসা ইত্যাদির উৎস হলো ভূমি ও ভূমি থেকে উৎপাদিত ধান, সরিষা, তিল, তুলা, ফলমূল ইত্যাদি ফসল। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকেরা ব্যবসা বানিজ্য করতে জানে না। তারা একাজে অভ্যস্ত্ম নয়। এ জাতির মানুষেরা ব্যবসা বানিজ্য সবে শেখা শুরম্ন করেছে মাত্র। শিÿার হার যেহেতু স্বল্প তাই চাকরি এ জাতির জন্য সোনার হরিণ। সেকারণে এ পর্যায়ে ত্রিপুরা জাতির মানুষেরা তাদের খাদ্য উৎপাদন ও অর্থ উপার্জন মূলত: ভূমির উপর নির্ভরশীল। সন্ত্মানদের শিÿার খরচসহ অন্যান্য খরচ ভূমি থেকে উৎপাদিত ফসল বিক্রয়কৃত অর্থ থেকে মিটিয়ে থাকে। তাই এ মূহুর্তে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকদের ভূমি রÿা করে দিয়ে এ জাতির শিÿা ও অন্যান্য ÿেত্রে এগিয়ে যাবার পথ সুগম করে দেয়া জাতির সামাজিক-রাজনৈতিক নেতা ও শিÿিত মানুষের অন্যতম নৈতিক দায়িত্ব হওয়া অত্যাবশ্যক।
ভূমি রÿার বিষয়টি অন্য একটি কারণেও গুরম্নত্ব প্রদান করা দরকার। ত্রিপুরা জাতি বর্তমানে একটি দুর্বল জাতি। মূলত: নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে এ জাতি দুর্বল হয়ে আছে। এ দুর্বলতার সুযোগে বিভিন্ন জাতির অর্থশালী ভূমিদস্যুরা ত্রিপুরাদের ভূমি বেদখল করে চলেছে। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকেরা বর্তমানে প্রতিনিয়ত তাদের পিতৃভূমি হারাচ্ছে। পরিতাপের বিষয় যে, এ ব্যাপারে সামাজিক-রাজনৈতিক নেতাসহ সমাজের শিÿিত ব্যক্তিরা কেন যেন নিষ্ক্রিয়, দায়িত্বহীন ও ভীতশ্রদ্ধ। যে তরম্নণসমাজ চির সংগ্রামী এÿেত্রে ত্রিপুরা তরম্নণসমাজকেও দেখা যায় প্রায় নির্লিপ্ত। এ অন্যায় ও নিজ জাতির মানুষের প্রতি নানা ধরণের নিপীড়ণ-নির্যানের বিরম্নদ্ধে ত্রিপুরা তরম্নণসমাজ- এর নেই কোন প্রতিবাদ কিংবা প্রতিরোধ। বিষয়টি অত্যন্ত্ম পীড়াদায়ক। এ সকল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে ত্রিপুরা জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে সকল ÿুদ্র ও সংকীর্ণ স্বার্ধকে প্রাধান্য না দিয়ে, জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ত্রিপুরাদের চিরায়ত ভূমি রÿার কাজে জাতির সকল সদস্যকে আত্মনিয়োগ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নইলে এ জাতি তাদের চিরায়ত ভূমি হারাবে। ভূমি হারালে এ জাতির উন্নয়ন রম্নদ্ধ হয়ে যাবে। এমনকি এ জাতি দারিদ্রের সাথে চিরবাস করতে হবে এবং অপর জাতির গলগ্রহ হয়ে থাকবে।
৩. সুনেতৃত্ব: একটি জাতির উন্নয়নের প্রশ্নে জাতিতে সুনেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়টি খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। সামাজিক, রাজনৈতিক, গ্রাম, শহর, সংগঠন সকল ÿেত্রে সুনেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা একান্ত্ম প্রয়োজন। সমাজে সুনেতৃত্ব ব্যতিত কোন উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্ত্মবায়ন করা কোনভাবে সম্ভব নয়।
উপরে আলোচিত বিষয় ছাড়াও আরো অনেক বিষয় রয়েছে, যেমন- সংস্কৃতি রÿা ও উন্নয়ন, ব্যবসা-বানিজ্য চর্চা ও প্রসার ইত্যাদি। তবে এগুলো উপরে উলেস্নখিত তিনটি বিষয়ের অধীন। উপরে উলেস্নখিত তিনটি বিষয় পরিপূরণ লাভ করলে বাকী বিষয়গুলি বিকশিত হবে।
একটি গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়
অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও ত্রিপুরা সমাজের জন্য বর্তমানে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ত্রিপুরা জাতির মাঝে একজন এমপি (শ্রী যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা) আছেন যিনি প্রতিমন্ত্রী মর্যাদাসম্পন্ন, যিনি বাংলাদেশের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর প্রথম এমপি। বর্তমানে ত্রিপুরা জাতি থেকে একজন সচিব আছেন (শ্রী নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা- ভারপ্রাপ্ত সচিব), যিনি ত্রিপুরা জাতির প্রথম সচিব, এমন কি বাংলাদেশের আদিবাসীদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যিনি কোন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। অপরদিকে গত কয়েক মেয়াদ ধরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোক দখল করে রাখছেন। বর্তমানেও এ পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর (শ্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা) একজন আসীন রয়েছেন।
এটি ত্রিপুরা জাতির জন্য যেমনি গর্বের বিষয়, তেমনি সরকারী কোষাগার থেকে অর্থ/সম্পদ এনে জাতিকে উন্নয়ন করার ÿেত্রে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগ অতীতে কখনো আসেনি। আগামী দিনে এ ধরণের সুযোগ সৃষ্টি হবে কি না যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। দূর অতীতে হতে পারে। তবে তার জন্য ত্রিপুরা জাতিকে অনেক কর্তব্য পালন করতে হবে এবং তা অবশ্যই সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে এ কাজটি অত্যন্ত্ম সুকঠিন কাজ।
যে কথা বলছিলাম- এ সময়টি ত্রিপুরা জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক সময়, ঐতিহাসিক সুযোগও বটে। ত্রিপুরা জাতি ও জাতির নেতৃত্বকে এ ঐতিহাসিক সময় ও সুযোগকে সদ্ব্যবহার করতে পারা উচিত। এর জন্য দরকার একটি সঠিক পরিকল্পনা ও পরিকল্পনা বাস্ত্মবায়নের সাহস সহকারে আন্ত্মরিক উদ্যোগ।
বর্তমান সময়ে ত্রিপুরা জাতিকে রÿা, উন্নয়ন ও বিকাশ সাধনে এই তিনজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির ঐতিহাসিক দায় হয়ে দেখা দিয়েছে। এই তিনজন ব্যক্তি যদি তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন না করেন ইতিহাস তাদের ÿমা করবে না। ইতিহাস আমাদেরও ÿমা করবে না। সমাজের একজন সদস্য হিসেবে, সমাজের একজন শিÿিত ও সচেতন ব্যক্তি হিসেবে, একজন সামাজিক অথবা রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আমাদের সকলের দায়িত্ব রয়েছে।
তবে আর একটি কথা এখানে বলা দরকার যে, উপরে উলেস্নখিত তিনজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি ত্রিপুরা জাতি ব্যতিত অপরাপর জাতির উন্নয়নের জন্য কাজ করবে না তা নয়, তা হতে পাওে না। তাঁরা সকলের প্রতিনিধি। সে হিসেবে তাঁরা সকল জাতির সকল প্রান্ত্মিক মানুষের উন্নয়নের জন্য অবশ্যই কাজ করবেন- এ তাঁদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে যে জাতি ঐতিহাসিকভাবে নিপীড়ণ ও বঞ্চণার শিকার, যে জাতি নানা কারণে এখনো সরকারী সেবা ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত সে জাতির উন্নয়নের প্রশ্নে, উন্নয়ন বরাদ্ধের প্রশ্নে অগ্রাধিকার পাবার অধিকার ও যুক্তিকতা রয়েছে। যে তিনজন দায়িত্বসম্পন্ন ব্যক্তির কথা বললাম তা একারণে বললাম যে, তাঁরা ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোক। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোক হিসেবে তাঁদের দায়িত্ব একটু বেশী। তবে অপরাপর জাতির মানুষেরা এমপি, চেয়ারম্যান-মেম্বার হলে তাঁরা এ দায়িত্ব পালন করবেন না তাও হতে পারে না। অপরাপর জাতির প্রতিনিধিদেরও ত্রিপুরা জাতির এই ঐতিহাসিক বঞ্চণার বিষয়টি স্মরণে রাখা উচিত বলে মনে করি। সাথে এ জাতির অতীত ও বর্তমান প্রান্ত্মিকতার বিষয়টিও বিবেচনা রাখা বাঞ্চনীয় হবে বৈ কি।
-------------------------------