ত্রিপুরা জাতির খার্চী পূজোত্সব – প্রভাংশু ত্রিপুরা
ত্রিপুরা একটি প্রাচীন জাতি৷ ভারত উপমহাদেশে এ জাতি ‘ত্রিপুরা’ নামে সমধিক পরিচিত৷ অতীতে এ জাতির রাজন্যবর্গ অভিহিত হন ‘মাণিক্য রাজা’ নামে৷ বাংলাদেশে এ জাতির লোকসংখ্যা দুই লৰাধিক৷ এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাস করে দেড় লৰাধিক৷ বাদবাকি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বিৰিপ্তভাবে বসবাস করছে৷ ত্রিপুরিদের মূল আবাসস্থল ত্রিপুরা রাজ্যে৷ ত্রিপুরা রাজ্যে এ জাতির লোকসংখ্যা ১৫ লৰাধিক৷ সমগ্র ভারত উপমহাদেশে ত্রিপুরিদের লোকসংখ্যা নির্ণিত হয়েছে ২৫ লৰাধিক৷ ত্রিপুরিরা সনাতন ধর্মের অনুসারী৷ এ জাতির যে কয়েকটি পূজা অনুষ্ঠান সার্বজনীনতা লাভ করেছে সেগুলোর মধ্যে খার্চী, কের, দুর্গোত্সব, কোজাগরী, ত্রিপুরেশ্বরী ও গরিয়া পূজা প্রধান৷ বর্ণিত পূজা উত্সবগুলো পারস্পরিক মিলন ও সংহতির উত্সব৷ ত্রিপুরিদের প্রধান ধর্মীয় পূজোত্সবের নাম ‘খার্চী’ পূজা৷ খার্চী পূজার পর দুর্গাপুজা৷ ১৪ জন দেবদেবীকে এক বেদীতে প্রতিস্থাপন করে যে পূজা অনুষ্ঠান হয় সেটি ‘খার্চী পূজা’ নামে পুরো ভারতবর্ষে প্রসিদ্ধ লাভ করেছে৷ চতুর্দশ দেবদেবী প্রতিস্থাপিত মন্দিরকে অভিহিত করা হয় ‘চতুর্দশ দেব মন্দির’৷ ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এই চতুর্দশ দেব মন্দির৷ এ মন্দিরটিই ত্রিপুরা জাতির কূলদেবতা মন্দির এবং প্রধান তীর্থ ৰেত্র৷ এমন মন্দির ভারতবর্ষের আর কোথাও নেই৷ কথিত আছে, ত্রিপুরা মহারাজা ত্রিলোচন, মহাদেব কতর্ৃক আদিষ্ট হয়ে দ্বাপর যুগের শেষপ্রানত্মে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে অবিস্মরণীয় এই চতুর্দশ দেব মন্দিরটি ত্রিপুরা রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন৷ ত্রিপুরা জাতির নিজস্ব বর্ষপঞ্জিকা ‘ত্রিপুরাব্দ’ অনুসারে প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথি থেকে আগরতলার চতুর্দশ দেব মন্দিরে খার্চী পূজা শুরম্ন হয় এবং সাত দিনব্যাপী চলে পূজা অনুষ্ঠান৷ ত্রিপুরা রাজ্যের অধিবাসী ত্রিপুরিরা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় আড়ম্বর সহকারে ‘খার্চী পূজ্যোত্সব’ উদযাপন করে থাকে৷ ত্রিপুরা রাজ্যে এ সময় সরকারি ছুটি ঘোষিত হয়৷ খার্চী পূজোতে মোষ, পাঁঠা, বরাহ, অনুপৰী ইত্যাদি বলি দেয়ার প্রথা প্রচলিত আছে৷ শৈব, শাক্ত ও বৈষ্ণব এই সমন্বিত সাধন প্রণালী অনুযায়ী তান্দ্রিকাচারে খার্চী পূজো অনুষ্ঠিত হয়৷ বাংলাদেশে ত্রিপুরিদের জনজীবনে চতুর্দশ দেব উপবাস, কেউবা সংযমীব্রত পালন করে ধর্মীয় কার্যাদি সম্পাদন করে থাকে৷ আগরতলায় প্রতিষ্ঠিত চতুর্দশ দেব মন্দিরে স্থাপিত দেবদেবীরা হচ্ছেন : ১. সিবরাই (মহাদেব), ২. সংগ্রাংমা (কালী), ৩. হাচুকমা (বসুন্ধরা), ৪. সুকুন্দ্রাই (কার্তিক), ৫. মুকুন্দ্রাই (গনেশ), ৬. তোয়বুকমা (জলদেবী), ৭. মাইলুকমা (লক্ষ্মী দেবী), ৮. ইৰিত্রা (অগি্নদেব), ৯. বিৰিত্রা (পবনদেব), ১০. কালাকতর (মহাকাল), ১১. কালাৰী (যম), ১২ রন্দকা (কুবের), ১৩. দন্দকা (কামদেব) ও ১৪. বণিরক (অশ্বিনীকুমারদ্বয়)৷
চতুর্দশ দেবদেবীর বিশেষত হলো, প্রত্যেকের শিরোপরে অর্ধচন্দ্র বাণ খচিত৷ মহাদেব ছাড়া বাকি ১৩ জন দেবদেবীর মুকুট স্বর্ণে নির্মিত৷ চতুর্দশ দেব-দেবীদের প্রধান মহাদেবের মুকুট রূপ্য নির্মিত এবং মহাদেবের বিগ্রহটি সবার বড়৷ ত্রিপুরী জাতি চন্দ্র বংশীয় ৰত্রিয় কূলজাত বলেই কুলীয় চিহ্ন হিসেবে দেব-দেবী মুকুটেও চন্দ্রধ্বজ খচিত হয়৷ চতুর্দশ দেব মন্দিরের প্রধান পুরোহিতকে বলা হয় ‘রাজ চোনত্মাই’৷ সহকারী পূজকদের বলা হয় ‘দেওড়াই ও গালিম’৷ পুরোহিতরা সরকারি বিধিমতে নিযুক্ত হন৷ খার্চী পূজা অনুষ্ঠানে বিশেষ গোপনীয়তা অবলম্বন করার রীতি প্রচলিত আছে৷ পূজা চলাকালীন যেদিন গভীর রাতে ‘হজাগিরি’ নৃত্য অনুষ্ঠিত হয় সেদিন রাজ পুরোহিত ছাড়া সাধারণের ঘরের বাইরে চলাফেরা করা বা বিচরণ করা নিষিদ্ধ৷ ত্রিপুরা রাজ্যে আজও এ রীতি প্রচলিত রয়েছে৷ সে দেশে এই আইন অমান্যকারীদের সরকারি আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়৷ ‘হজাগিরি’ শব্দের বাংলা অর্থ হয় ‘ভয়ঙ্কর রাত্রি’৷ তান্ত্রিক পদ্ধতিতে এ নৃত্য অনুষ্ঠিত হয় এবং এ নৃত্যের মুদ্রা ১৪টি৷ সুপ্রাচীনকাল থেকে চতুর্দশ দেব মন্দিরের খার্চী পূজা অনুষ্ঠান সব সত্মরের মানুষের কাছে সার্বজনীনতা অর্জন করে অতীত-ঐতিহ্যের মহিমা ও গৌরব আজও বহন করে চলেছে৷
চতুর্দশ দেবদেবীর বিশেষত হলো, প্রত্যেকের শিরোপরে অর্ধচন্দ্র বাণ খচিত৷ মহাদেব ছাড়া বাকি ১৩ জন দেবদেবীর মুকুট স্বর্ণে নির্মিত৷ চতুর্দশ দেব-দেবীদের প্রধান মহাদেবের মুকুট রূপ্য নির্মিত এবং মহাদেবের বিগ্রহটি সবার বড়৷ ত্রিপুরী জাতি চন্দ্র বংশীয় ৰত্রিয় কূলজাত বলেই কুলীয় চিহ্ন হিসেবে দেব-দেবী মুকুটেও চন্দ্রধ্বজ খচিত হয়৷ চতুর্দশ দেব মন্দিরের প্রধান পুরোহিতকে বলা হয় ‘রাজ চোনত্মাই’৷ সহকারী পূজকদের বলা হয় ‘দেওড়াই ও গালিম’৷ পুরোহিতরা সরকারি বিধিমতে নিযুক্ত হন৷ খার্চী পূজা অনুষ্ঠানে বিশেষ গোপনীয়তা অবলম্বন করার রীতি প্রচলিত আছে৷ পূজা চলাকালীন যেদিন গভীর রাতে ‘হজাগিরি’ নৃত্য অনুষ্ঠিত হয় সেদিন রাজ পুরোহিত ছাড়া সাধারণের ঘরের বাইরে চলাফেরা করা বা বিচরণ করা নিষিদ্ধ৷ ত্রিপুরা রাজ্যে আজও এ রীতি প্রচলিত রয়েছে৷ সে দেশে এই আইন অমান্যকারীদের সরকারি আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়৷ ‘হজাগিরি’ শব্দের বাংলা অর্থ হয় ‘ভয়ঙ্কর রাত্রি’৷ তান্ত্রিক পদ্ধতিতে এ নৃত্য অনুষ্ঠিত হয় এবং এ নৃত্যের মুদ্রা ১৪টি৷ সুপ্রাচীনকাল থেকে চতুর্দশ দেব মন্দিরের খার্চী পূজা অনুষ্ঠান সব সত্মরের মানুষের কাছে সার্বজনীনতা অর্জন করে অতীত-ঐতিহ্যের মহিমা ও গৌরব আজও বহন করে চলেছে৷